বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন বলে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বুধবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘সব কিছু জিজ্ঞাসাবাদ, ডাক্তার সাহেব যে কথাটা বলেছেন, ভিকটিমের কাপড়ে কোথাও ছেঁড়ার কোনো লক্ষণ আমরা পাইনি। তাকে যে মারপিট করা হয়েছে এমন কোনো চিহ্ন ছিল না। ধস্তাধস্তি বা আঘাতের চিহ্নও নেই।‘
ঢাকার ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফারদিন লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘তার (ফারদিন) স্পেন যাওয়ার কথা ছিল, টাকা ম্যানেজ হয়নি। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল। সবকিছু মিলেই মনে হয়েছে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এছাড়া তার লাশের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। যদি হত্যাকাণ্ড হতো আঘাতের চিহ্ন থাকত। মারধর করা হলেও চিহ্ন থাকত। কোনোটার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘ফারদিন সাঁতার জানতো না। সবকিছু মিলে আমরা মনে করছি এটি আত্মহত্যা।’
হারুন বলেন, ‘ফারদিন নারায়ণগঞ্জের চানপাড়ায় কোনো অবস্থাতেই যায়নি। কাঁচপুরের সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা ধারণা করছি। ব্রিজ থেকে পড়ে যে শব্দ হয় সে ব্যাপারে আমরা প্রমাণও পেয়েছি।’
ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, ‘ঘটনা রাতে তার বান্ধবী বুশরাকে রামপুরা ব্রিজে নামিয়ে দেওয়ার পরে রাত নয়টার পরে কেরানীগঞ্জের একটি ব্রিজের কাছে গিয়েছিল ফারদিন। এরপর সেখান থেকে জনসন রোডে যায়। এরপর গুলিস্তান হয়ে যাত্রাবাড়ীতে। এরপরে সেখান থেকে রাত দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ী। দুইটা সাত মিনিটে লেগুনাতে উঠে। পরে দুইটা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজে যায়।’
ডিবির প্রধান আরও বলেন, ‘ফারদিন যেসব জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে এগুলো পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, সে একাই ছিল। তার সাথে কেউ ছিল না। এছাড়া সে যার যার সাথে কথা বলেছে তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি।’
গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুই দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
৯ নভেম্বর মধ্যরাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একজনের নাম উল্লেখ করে বাকিদের অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় ১০ নভেম্বর ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে জানানো হয়, তার হত্যার পেছনে কিশোর গ্যাংয়ের হাত আছে। মাদকের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথাও প্রচার হয়। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফারদিন কোনো দিন সিগারেটও স্পর্শ করেননি। ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে এবং শিগগির রহস্য উন্মোচিত হবে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন বক্তব্যের মধ্যেই বুধবার জানানো হলো, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি এ ব্যাপারে র্যাবও তথ্য পেয়েছে জানিয়ে রাতেই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এলিট ফোর্স।