আগামী সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে অনড় অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আপনি বলতেই পারেন যেকোনো একটা কোম্পানির ওষুধে ভেজাল থাকতে পারে, কিন্তু সব কোম্পানির ওষুধে ভেজাল আছে বিষয়টি এমন নয়। আমাদের ইভিএমটা ভিন্ন ধরনের।’
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।
বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বিরোধিতা থাকলেও আগামী নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে শুরু থেকেই ইভিএমে কারচুরি সুযোগ নেই এমনটা দাবি করে আসছে সংস্থাটি। এবার একজন নির্বাচন কমিশনার ইভিএমের পক্ষে সাফাই গাইলেন। যেসব যুক্তি দিয়ে রাজনীতিবিদ ও অন্যরা ইভিএমের বিরোধিতা করছেন তাও খণ্ডনের চেষ্টা করেন তিনি।
ইভিএমের প্রযুক্তিগত দিক তুলে ধরতে গিয়ে ইসি আলমগীর বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রথমেই যেটা বলা যে, প্রোগ্রামিং করে ফল পাল্টে দেওয়া যায়। তাত্ত্বিক দিক দিয়ে যারা বলেন তারা হয়ত ঠিকই বলেন। কিন্তু বাস্তবতার দিক দিয়ে এটা মোটেই ঠিক নয়।’
ইসি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয় হলো, এই ইভিএমে যে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে, তাতে শুধু যোগ করতে পারে। যে প্রার্থী আছে তাদের ভোটটা যোগ করতে পারে। আর কিছু করতে পারে না। প্রোগ্রামিংটা ওইভাবে করা। কাজেই কেউ যন্ত্রে বা বাইরে থেকে ম্যানুপুলেশন করবে সে সুযোগ নেই। কারণ এটার যে চিপস ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে রাইট করা হয়, এটা হলো ওয়ান-টাইম ইউজেবল। কাজেই একবার রাইট করা গেলে রি-রাইট বা এডিট করার কোনো সুযোগ থাকে না।’
ইভিএমে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই এমনটা জানিয়ে সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, ‘ইভিএমের সঙ্গে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে যে সংযোগ দেওয়া হয়, এটা কিন্তু কাস্টমাইজ করা। বাজারে কেনা কোনো ক্যাবল, ড্রাইভ কোনো কিছুই এটার মধ্যে ইনসার্ট করতে পারবেন না। কেবল এই ইভিএমের জন্য যে ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে, সেটা ছাড়া আর কোনো ডিভাইস যোগ করতে পারবেন না।’
ইভিএম নিয়ে যারা বিরোধিতা করে তারা না জেনে বলেন- এমন দাবি করেন মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এটা কেবল যোগ-বিয়োগ করে। ক্যালকুলেটরের মতো। ক্যালকুলেটরে যেমন প্রোগ্রাম পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। আমাদের ইভিএমে সে সুযোগ নেই। ইভিএম নিয়ে যে অপপ্রচার আছে, যারা বলেন তারা না জেনে না বুঝে বলেন। তারা চাইলে যেকোনো ইভিএমে চেক করে দেখতে পারেন।’
এসময় এই নির্বাচন কমিশনার ব্যালট এবং ইভিএমে ভোট হলে কেমন স্বচ্ছ হতে পারে তারও তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে ভোট নেওয়ার সুবিধা হলো ভোটের আগে পরে ভোট দেওয়ার সুযোগ অথবা ভোটার ছাড়া কেউ এসে ভোট দিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। একটা দুর্বলতা আছে, যে গোপন বুথে যদি ভোটারকে ঢুকতে না দেওয়া হয়, এই সুযোগটা আছে। যদি ১০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে আসে তবে ১০ শতাংশ ভোটই কাস্ট করতে পারবে। আর ব্যালটে ১০ শতাংশ ভোটার এলে শতভাগ ভোট দেওয়ার সম্ভব। এটার মাধ্যমে জালিয়াতি কোনো সুযোগ নেই।