চাল, ডিম, মুরগি, প্রসাধনের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর অভিযোগ এনে ১১ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার পরদিন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে কেনাকাটায় আরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে মানুষকে। ফলে রান্নার খরচ আরও গেছে বেড়ে।
আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে চাল, ডিম, মুরগির মাংসের দাম। এ তিনটি পণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনেই কারসাজির প্রমাণ পেয়ে মামলা করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। বৃহস্পতিবার মামলার পর আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে কোম্পানিগুলোকে।
প্রতিযোগিতা কমিশন চালের বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ ও নওগাঁর বেলকন গ্রুপের বেলকন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ইস্কাটন, বাড্ডাসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মোটা-সরু সব চালের দামই বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। ২ টাকা বেড়ে মোটা স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় ও বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়।
চিকন চালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মিনিকেট ও নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮৪ টাকায়।
কারওয়ান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জমির ব্যাপারী বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া এখন চালের মৌসুম শেষ। যদিও চাল আমদানির কথা শুনছি, কিন্তু বাজারে সেগুলো আসছে না। এ জন্য চালের দাম বাড়ছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও চাহিদামতো চাল মিলছে না। মোকামে যে পরিমাণ চালের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে তা পাওয়া যাচ্ছে না।’
চলতি সপ্তাহের আগে টানা তিন সপ্তাহ চালের দামে ছিল ভাটার টান। কেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা কমেছিল ওই সময়ে।
বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বেড়ে গেছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৭২ টাকা দরে, সেটি বেড়ে হয়েছে ১৭৭ টাকা।
ডিমের সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ্, কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মুরগির বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগও আনা হয়েছে প্যারাগন পোলট্রি ও কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হয়েছে।
মামলার পরদিন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ডিমের দর আবার দিয়েছে লাফ। গত মাসে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। পরে দাম কমতে কমতে নেমেছিল ১২০ টাকায়। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে আবার বাড়তে থাকে। ডজনের দাম হয়ে যায় ১৩৫ টাকা, সেটি আবার বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা।
কারওয়ান বাজার, বাড্ডা, রামপুরা বাজারে দেখা গেছে, ফার্মের মুরগির প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, কোথাও কোথাও ৫০।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। কিছুটা বেড়েছে মুরগির দামও।
রামপুরা এলাকার মুরগি বিক্রেতা হাসান বলেন, ‘গত সপ্তাহে মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ টাকা।’
গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজির মৌসুম শেষ প্রায়, শীতের আগাম সবজির জোগান বাজারের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। আর সরবরাহে টান পড়ার কারণে প্রতি বছরের মতো শীতের আগে আগে দাম বাড়ার যে প্রবণতা দেখা যায়, সেটি দেখা যাচ্ছে এবারও।
সবজিভেদে দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বেগুন ১০০, কচুরলতি ৮০, মুলা ৬০, শসা ৭০, করলা ৮০, ঢেঁড়স ৬০, পটোল ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০, শিম ১৫০ থেকে ১৬০, কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০, পেঁপে ২০ থেকে ৩০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাঁধাকপি ও ফুলকপি উঠতে শুরু করেছে, আকারে ছোট, তবে দামে বড়; একেকটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেড়ে গেছে মিষ্টি কুমড়ার ফালির দামও। কেউ বিক্রি করছে ৩০ টাকায়, কেউ কেজি প্রতি দাম চাইছে ৪০ টাকা।
দাম বেড়েছে আদা-রসুনেরও। আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ১২০ টাকা কেজি দরে যে আদা বিক্রি হয়েছে, আজ সেই আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে।
আমদানি করা ৮০ টাকা কেজি আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে।