নারী নেতৃত্ব এগিয়ে নিতে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব

0
397
নারী নেতৃত্ব এগিয়ে নিতে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব

যে কোনো সংকটের কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের নীতিনির্ধারণী টিমে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নারী নেতৃত্বকে আরও এগিয়ে নিতে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ট্রান্সফরমেটিভ সল্যুশন্স বাই উইমেন লিডারস টু টুডেইজ ইন্টারলিংকড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে নানা ক্ষেত্রে নারীদের সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘সংকটের সময় নারীরা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং সংকটের কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

‘নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে। সব গতানুগতিকতা ভেঙে তারা অদম্য সাহস এবং নেতৃত্বের দক্ষতা দেখাচ্ছে। নারীদের অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপকৃত হতে ও সমস্যার সমাধান পেতে নারীদের নেতৃত্বে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মতবিনিময় এবং শুধু নিজ দেশের জন্য নয়, মানবতার কল্যাণে ইতিবাচক ফল আনতে এই নেটওয়ার্কটি (ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অফ উইমেন লিডার্স) যথাযথ ব্যবহারের এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে উন্মুখ।’

নারী নেতৃত্বকে আরও এগিয়ে নিতে তিনটি প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘আমি লিঙ্গ সমতা বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রশংসা করি। এটিকে এখন স্থানীয়করণ করা প্রয়োজন। সব স্তরে আমাদের লিঙ্গ চ্যাম্পিয়ন প্রয়োজন, বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে এবং আমরা এটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করতে পারি।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘নারী নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোকে পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের প্রচেষ্টায় সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’

তৃতীয়ত ও শেষ প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ‘লিঙ্গ সমতার জন্য আমাদের এজেন্ডাগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য একটি লিডার্স সামিট করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির জন্য সব নেতার যোগ দেয়া এবং দৃঢ় অঙ্গীকার করা উচিত।’

নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) তিনটি লক্ষ্য অর্জনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২৭ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে, সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সর্বত্র নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের নারীদের সামনের সারিতে নিয়ে আসছি।’

টানা তিনবারের সরকার প্রধান জানান, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতমুক্ত ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের ১৫ শতাংশ তহবিল, ১০ শতাংশ শিল্প প্লট এবং ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তহবিল নারীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।