শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ‘মায়ের ডাকে’র কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যেতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা সঠিক কাজ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষ ক্যাবল অপারেটর সংগঠন ‘কোয়াব’র নবনির্বাচিত পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, গতকাল মার্কিন রাষ্ট্রদূত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেলে অনেক ভালো হতো। আমি জানি না তাকে কে মায়ের ডাকের বাসায় যেতে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা ঠিক হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতো না। গতকাল মায়ের ডাকে কারা রাষ্ট্রদূতকে বিতর্কিত করেছেন।
‘এটা করা সমীচীন হয়নি। তিনি গেছেন শুনে মায়ের কান্না সংগঠনের কর্মীরা ৫০ জনের মতো, স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিলেন। নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকারই সুযোগ দেয়নি। তিনি যদি তাদের কথা শুনতেন তাহলে বিতর্ক হতো না।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা নিয়ে গেছেন তারা দূতকে প্রচণ্ড সমালোচনায় ফেলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। সম্পর্ক ভালো। এ ঘটনায় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না। ভুল পরামর্শের বিষয়ে সতর্ক থাকতে তাকে আমি অনুরোধ করবো।
তিনি বলেন, গতকাল ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন সবাই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। অনেক সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে শ্রদ্ধা জানান। গতকাল সেই দিনে যদি মার্কিন রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যেতেন তাহলে সেটি অনেক ভালো হতো এবং বাঙালির জাতির যে স্বাধীনতা এবং এই স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে যে বাঙালি জাতির কষ্ট-ত্যাগ সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো।
‘আমি জানি না তাকে কে পরামর্শ দিয়েছিল সেদিন মায়ের ডাক নামের সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যেতে। যারাই এ পরামর্শ দিয়েছেন তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। আমি মনে করি, যেই পরামর্শ দিক সিদ্ধান্ত তো নিজের। কাজেই তারও আসলে দিবসের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘তিনি যে সেখানে যাবেন এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কিছু জানতো না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটি বলেছেন। মায়ের ডাক সংগঠন তারাই করেছে যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই আবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পলাতক। অনেকে খুনের মামলার আসামি, অনেকে মাদক মামলার আসামি। তাদের বিএনপি গুম হয়েছে বলে বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে।
‘গতকাল যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে গেছেন তারা তাকে বিতর্কিত করেছেন। এখানে বিতর্কিত করা সমীচীন হয়নি। তিনি সেখানে গেছেন এটি শুনে মায়ের কান্না সংগঠনের ৫০ জনের মতো গিয়েছিলেন। তারা গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলীপি দিতে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তারা সে সুযোগ দেননি। তারা কথা বলতে চেয়েছিলেন, কথাও বলতে পারেননি। আমি মনে করি মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপি নিতেন এবং তাদের সাথে দু’কথা বলতেন তাহলে তার যাওয়া নিয়ে যে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে সেটি হতো না।
অবশ্য এ ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো অবণতি হবে না বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় তাদেরও বিরাট ভূমিকা আছে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ।’
‘আমি মনে করি, এ ঘটনা সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। মার্কিন দূতকে আমি অনুরোধ করবো, তাকে যদি কেউ ভুল পরামর্শ দেয়, তাকে যদি এভাবে একপেশে করে তোলার চেষ্টা করে সেটির বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ তাকে জানাবো।’
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কি করবেন সেটি তারা বলতেই পারেন। এটি বলা কোনো অপরাধ না। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে না।
‘যারা মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, যারা মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে তাদের ডাকে মানুষ সাড়া দেয়নি, দেবেও না। ১০ তারিখ সরকার পতন ঘটাতে এসে নিজেদের পতন ঘটিয়ে চলে গেছে।