চট্টগ্রামে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতাদের তালিকা করছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ১৬ থানায় এই তালিকা করা হচ্ছে বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তালিকায় বিএনপি নেতাদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ভুয়া মামলায় আসামি করা ও হয়রানির জন্যই এই তালিকা করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ এটা করছে।
নেতারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা হামলা-মামলা নিয়ে ভীত নন। এভাবে তাদের দমানো যাবে না।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক সূত্র ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, গত ১৭ জুলাই পুলিশ সদরদপ্তর থেকে চট্টগ্রামে পদধারী বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতাদের তালিকা করতে চিঠি পাঠানো হয়। পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে নগরীর ১৬ থানায় ২১ জুলাই চিঠির দিয়ে ২ দিনের মধ্যেই তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন থানাধীন এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর ইতোমধ্যে ঘোষিত কমিটির পদধারী নেতাদের সম্পর্কে তথ্যগুলো ছক অনুযায়ী হার্ডকপি বাহক মারফত এবং সফট কপি ই-মেইলে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে এর তথ্য এবং পরবর্তীতে কোনো কমিটি গঠিত হলে সেই তথ্যও ছক অনুযায়ী পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
চিঠির কপি ডেইলি স্টার সংগ্রহ করেছে। তবে নগর পুলিশের কর্মকর্তাদের দাবি, এমন কোনো তালিকা করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এ এস এম মাহাতাব উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন ‘আপনাকে যিনি এই ধরনের তথ্য দিয়েছেন এই বিষয়ে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।’
তিনি এই বিষয়ে আর কথা বলতে রাজি হননি।
তালিকার বিষয়ে সিএমপির বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-পুলিশ কমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। আমরা বিএনপি নেতাদের কোনো তালিকা করছি না, এটি ভুল।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের এক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা নতুন কিছু নয়। এবার কমিটির বিস্তারিত তথ্য এবং এনআইডি নম্বর যুক্ত হয়েছে।’
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা তালিকা নিয়ে ভীত নই। তালিকা করে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আমাদের নেতাকর্মীদের দমানো যাবে না। পুলিশ এখন সরকারের ঢাল হিসেবে কাজ করছে। আমাদের কর্মীদের মনোবল দেখে তারা ভীত।’
‘গণতন্ত্রের জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। যে সব উৎসুক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবে এবং হয়রানি করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরাও মামলা করব। এবার আমরা ছেড়ে কথা বলব না,’ যোগ করেন তিনি।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘এ ধরনের তালিকা পুলিশ আগেও করেছিল। তালিকা ধরে আমাদের নেতাদের মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমানো যাবে না। আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
দলীয় নেতারা বলছেন, নগর বিএনপির রাজনীতি গত কয়েক মাসের কর্মসূচিতে আবারো চাঙ্গা হয়েছে। দলীয় কার্যালয় নসিমন ভবন সরগরম হয়ে উঠেছে। কমিটি গঠন নিয়ে এবং নানা দাবি ও ইস্যুতে নেতাদের সরব উপস্থিতি কর্মীদেরকে নতুন করে সংগঠিত করেছে। জামিনে বের হয়ে অনেক নেতা আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
বিএনপির নেতাদের তথ্য অনুসারে, নাশকতার অভিযোগে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২ শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টি মামলা হয়েছে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে।