দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। এবারও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে রেকর্ড গড়েছে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এর পরিমাণ বেড়ে চার হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উঠেছে। এর আগে গত জুনে রিজার্ভ চার হাজার ৬৪০ কোটি ডলারে উঠেছিল।
এর আগে রিজার্ভ এত বেশি পরিমাণে বাড়েনি। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও রপ্তানি আয় বাড়া ও বৈদেশিক অনুদানের অর্থ ছাড় হওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। এদিকে রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধির পরও হঠাৎ করে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজারেও এর দাম বেড়েছে। এত বেশি রিজার্ভ থাকার পরও কেন ডলারের দাম বাড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের জোগান বাড়ানো হয়েছে।
গত অর্থবছরজুড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছিল। চলতি অর্থবছরে টানা তিন মাস রেমিট্যান্স কমেছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে কমেছে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। পুরো অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। রেমিট্যান্সের বিপরীতে সরকারিভাবে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক আরও এক শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের বিপরীতে ৩ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা পাচ্ছে।
এদিকে রপ্তানি আয়ে বেশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই মাসে হয়েছিল সাড়ে ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আড়াই শতাংশ। আগামীতে রপ্তানি আয় আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা বিশ্বে রপ্তানির পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এদিকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) আগস্টে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের আগস্টে আমদানি ব্যয় কমেছিল সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল ১৪ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির হারও বাড়ছে। খাদ্যসামগ্রী আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। করোনার পর এখন বিদেশ ভ্রমণ ও চিকিৎসায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের হারও বেড়েছে। এসব কারণে সার্বিকভাবে আমদানি বাড়তে শুরু করেছে।
এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের অর্থ ছাড়ও বেড়েছে। এসব মিলে সরকারের বৈদেশিক ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হচ্ছে। এতে করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় মেটাতে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন হয়। এ হিসাবে আলোচ্য রিজার্ভ দিয়ে ১০ থেকে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অথচ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) নিরাপদ মান অনুযায়ী একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ অনেক বেশি নিরাপদ।
এদিকে রিজার্ভ থেকে অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি বিল ও বন্ডেও বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ফলে করোনায় রিজার্ভ থেকে আয় যে হারে কমেছিল এখন আবার তা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বাড়তে শুরু করেছে।