‘মিশিগান থেকে মাসে ১০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স যাচ্ছে বাংলাদেশে’

জুয়েল সাদাত, মিশিগান থেকে ফিরে...

0
1277

আমেরিকার দ্বিতীয় বাংলাদেশী ঘনবসতিপুর্ন ষ্টেট মিশিগান। নিউইয়র্কের পরই বাংলাদেশের মানুষ বেশী বসবাস করেন মিশিগান। সেখানের ড্রট্রেয়েট হ্যামট্রামিক, ওয়ারেন, স্টাররিং হাইটস, ট্রয়, ডিযারবন, এন হারবার, শেলভি এই সব এলাকায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার প্রবাসী বসবাস করেন। ইমিগ্রান্ট হিসেবে যারা বাংলাদেশ থেকে আসেন তারা প্রথমে কিছুদিন নিউইয়র্কে থাকেন তারপর সহজ জীবনযাত্রার শহর মিশিগানে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে মিশিগান ছাড়াও নিউইয়র্ক এর একটি শহর বাফোলোতে অনেকেই যাচ্ছেন। তবে কাজের সহজলভ্যতা, জীবন যাত্রার স্বল্প ব্যয়, বাংলাদেশী ট্রাডিশনে থাকার নানা কারনে মিশিগান বর্তমানে সবার পছন্দ। মিশিগানে ১০ থেকে ১৫ মাইলের মধ্যে ৪৭ টি বাংলাদেশী গ্রোসারী রয়েছে। মিশিগানে প্রতি মাইলে একটি মসজিদ রয়েছে।

মিশিগানে “বাংলাদেশ এভিনিউ” সহ বর্তমানে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী প্রক্রিয়াধীন। সেখানে যে সকল প্রবাসীরা রয়েছেন তাদের মধ্যে ৫০ হাজারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশী এখনও সবুজ পাসপোর্ট বহন করেন এবং প্রতিদিন দুই তিন’শ প্রবাসী বাংলাদেশ ট্রাভেল করেন।

মিশিগানর কনান্ট স্ট্রীট সহ নানা জায়গায় মানি ট্রান্সফারের দোকান রয়েছে কম বেশী ৩৭ টি। সেখান থেকে প্রবাসীরা যে পরিমান রেমিট্যান্স প্রেরন করেন তার একটি আনুমানিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় শুধু মিশিগান থেকে বাংলাদেশী প্রবাসীরা ৬৫ কোটি টাকা প্রতি মাসে প্রেরন করেন। তবে নানা উংসবে সেটা ৭০/৭৫ কোটিতে গিয়ে দাড়ায়। মিশিগানের বেশ কয়েকজন রেমিট্যান্স স্পেশালিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ করে জানা গেছে এই তথ্য।

মিশিগানে গ্রোসারীর সংখ্যা ৪৭ টি তার মধ্যে ৩৩ টি গ্রোসারীতে প্রতিদিন নুন্যতম ১ হাজার থেকে দশ হাজার ডলার ট্রানজেকশন হয়ে থাকে। কনান্ট ট্রাভেল, টাকা মানি এক্সচেঞ্জ, কুইক সেন্ড, ওয়ালী এন্টারপ্রাইজ ও সোনালী এক্সচেঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রেমিট্যান্স প্রেরণে রয়েছে প্রথম সারিতে ৷ “সোনালী এক্সচেঞ্জ” নামের সরকারী প্রতিষ্ঠানটি সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবী রাখলেও বিকাল ৪ টায় সেটা বন্ধ হয়ে যায়, আবার বেশীর ভাগ সময় সেটা ৪ ঘন্টা খোলা থাকে। আবার নানান কাগজপত্রের নানা জটিলতায় সেখান থেকে টাকা প্রেরণে অনেকের অনাগ্রহ। মিশিগানে কনসুলেটের দাবীতে মিশিগান প্রবাসীরা সোচ্চার, তারা কি পরিমান রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন তার সঠিক পরিমান মাসে ১০০ কোটি।

৬৫ কোটি বা ৭০ কোটি প্রেরিত হচ্ছে লিগ্যাল চ্যানেলে বাকি ৩০ কোটি টাকা প্রবাসীরা নিজে বহন করে নিয়ে যান। মিশিগানের ৯০ হাজার প্রবাসীদের মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০ জন প্রবাসী প্রতিদিন বাংলাদেশে ভ্রমন করছেন। মাসিক হিসাবে ৫/৬ হাজার প্রবাসী মিশিগান থেকে বাংলাদেশ ভ্রমনকালীন সময়ে নিজে বহন করেন নুন্যতম পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার। নন ডিক্লারেশনে দশ হাজার বহন করা যায়। দুই সপ্তাহ নানা মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেল প্রতিমাসে মিশিগান থেকে ১০০ কোটি টাকা বাংলাদেশে রেমিটেন্স হিসাবে যাচ্ছে।

অনেক প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা জনিত কারনে সঠিক তথ্য দিতে চান নি ৷ তবে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্নধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি মাসে এক থেকে দেড় মিলিয়ন ডলার প্রেরণ করে থাকেন। এই সকল রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠানে সকাল দশটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত মানি ট্রান্সফার হয়ে থাকে। আমি নিজে সরেজমিনে গভীর রাতে মানি ট্রানজেকশন করতে দেখেছি লাইন ধরে। অনেকেই ফ্যাক্টরীতে জব করেন, সেখান থেকে সোজা টাকা পাঠাতে কনাট স্ট্রিটে চলে আসেন। প্লাসিড, স্মল ওয়ার্ল্ড, রিয়া, সোনালী এক্সচেঞ্জ সহ নানান কোম্পানীর মাধ্যমে রেমিট্যান্স যাচ্ছে বাংলাদেশে। আবার সরকারের দুই শতাংশ প্রনোদনা অনেককে লিগ্যাল চ্যানেলে টাকা প্রেরনে উৎসাহ দেয়। অনেকেই মোবাইল এ্যাপস দিয়েও টাকা পাঠিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে সারা আমেরিকার প্রবাসীরা কি পরিমান রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন সেই হিসাব করলে দেখা যায় তা মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। মিশিগানের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে পরিমান রেমিট্যান্স করেন সেই হিসাব করলে অনেক আগেই সেখানে বাংলাদেশ কনসুলেটের একটি অফিস স্থাপিত হতে পারত। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারনে কম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ফ্লোরিডার মায়ামী কনসুলেট পেয়ে গেল।

মিশিগান বাসী দাবী করেন, রেমিট্যান্সের অগ্রাধীকারী হিসাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীলরা অচিরেই মিশিগানে কনসুলেট এর অফিস স্থাপন এর ঘোষনা দিবেন।

মিশিগানের কয়েকজন প্রবীন কমিউনিটি নেতা জানান, মিশিগান প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভুমিকা পালন করছেন অথচ আমাদের একটি নায্য দাবী পুরন হচ্ছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কমিটেড ছিলেন, অথচ তিনি সেই দায় এড়িয়ে চলছেন। মিশিগানের কনসুলেট অনেক রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে নিঃসন্দেহে।