ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছিল, নারী হয়ে রেহানা একাই তার ছয় বছরের মেয়ে এবং তার এক শিক্ষার্থীর পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। সিনেমাটির ১৬ জুলাই শেষ দিনে পুরস্কার জয়ের সব রকম সম্ভাবনা আছে। ‘রেহানা’ চরিত্রের ওপর জোর দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ভ্যারাইটি। বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা অধীর আগ্রহে বসে ছিল সুসংবাদ শোনার জন্য। বিশ্বখ্যাত কান উৎসবের আঁ সার্তে রিগায় বিভাগের পুরস্কার যেন অর্জন করে বাংলাদেশি এই সিনেমাটি। সকল বাঙালির প্রার্থনা ছিল এটি। তবে কানে শেষ হাসি হাসতে পারেনি।
৭৪তম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথমবারের মতো লাল সবুজের পতাকার প্রতিনিধিত্ব করেছে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। চলচ্চিত্রটি আগামীকাল বাংলাদেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কানে যাওয়া থেকে শুরু করে ফেরা, ছবির পরিচালককে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু কাল রাজধানীর মহাখালীর স্টার সিনেপ্লেক্সে শেষ মুহূর্তে উদয় হলেন রেহানা মরিয়ম নূরের নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।
প্রদর্শনীর পূর্বে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ চলচ্চিত্রের শিল্পীদের সামনে এনে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সাদ শিল্পীদের একে পরিচয় করিয়ে বলেন, ‘আপনারা সবাই সময় বের করে এসেছেন, এজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।’
সাদ বলেন, ‘আমি পারসোনালি খুবই গ্রেটফুল আপনারা গত ৫ মাস ধরে যে ইনক্রেডিবল সমর্থন দিয়ে আসছেন। আমরা চেয়েছি আমাদের দেশের প্রেস মুক্তির আগে ছবিটি দেখুক। আমরা কৌতুহলি হয়ে আছে যে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের ছবিটি কেমন লাগে। আমি আশা করছি আপনাদের কাছে যদি ভালো লাগে তাহলে দর্শকদের কাছেও ভালো লাগবে।
এই নির্মাতা বলেন, আজকে এখানে আপনাদের সঙ্গে মাদের টিম মেম্বাররাও রয়েছেন। আমি আপনাদের সঙ্গে একটি অনুভূতি শেয়ার করতে চাই। আমার টিম মেম্বাররদের কথা আলাদা করে বলতে চাই না, তাদের এফোর্ট আজ এখানে নিয়ে এসেছে। তাদের কমিটমেন্ট তাদের ডেডিকেশন আসলে আজকে এই অবস্থার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ বলেন, ‘আমি খুবই খুবই খুবই লাকি যে লোকগুলো (টিম মেম্বাররা) আমাকে বিশ্বাস করেছে, আমার পুরো জার্নিতে আমাকে বিশ্বাস করে আমার সঙ্গে থেকেছে।’
চলচ্চিত্রে রেহানা মরিয়ম নূর সিঙ্গেল মাদার। ৬ বছর বয়সী এক ফুটফুটে কন্যার মা। মেয়েকে একা বড় করা, বাবা, মা ও ভাইয়ের দেখাশোনা, খরচ জোগাড়- সবই করতে হয় তাকে। এমন মানুষকে দৃঢ়তো হতেই হয়৷ কিন্তু রেহানা কতটা অবিচল তা বোঝা যায় যখন তিনি তার স্বামীর দেয়া ঘড়ি সবসময় পরে থাকেন। মেডিক্যাল কলেজের এই শিক্ষকের জেদ প্রমাণ করতে গিয়ে পরিচালক দেখান, যে তিনি ছাত্রীর নকল ধরার জন্য গিয়ে বসে থাকেন তার পাশে৷ সফলও হন৷
যখন একজন ছাত্রী আরেক শিক্ষকের কাছে যৌন নিপীড়িত হবার সময় ঘটনাটির একটি অংশ দেখে ফেলেন রেহানা। এরপর প্রতিকার চাইতে বারবার বললেও সেই ছাত্রী রাজি হচ্ছিলেন না। এরপর রেহানা নিজেই নিজেকে বানান ভিক্টিম। মূলত এই ঘটনাকে আবর্তিত করেই ছবিটি৷ অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়া আর নিজের জেদ, দুই মিলে রেহানাকে দাঁড় করায় এক ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতে। শিক্ষক রেহানার সামনে হাজির হয় কঠিন বাস্তবতা, নিজের কর্মস্থল, নিজের সন্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সবখানেই যে পরিবেশ, যে পরিস্থিতি- তার বিরুদ্ধে রেহানার নিরপেক্ষ, আপোষহীন লড়াই একটা সময় মুখ থুবড়ে পড়ে।