কোথায়, কেমন আছেন ছাত্রলীগের সেই আলোচিত নেত্রীরা?

0
68
ফ্যাসিস্ট হাসিনার গুণ্ডা বাহিনী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক সময়ের আলোচিত নেত্রী ছিলেন তারা। শিক্ষার্থী নির্যাতন, হলে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, সচিবালয়ে তদবির, নিয়োগ বাণিজ্য, ব্ল‍্যাকমেইলসহ কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না এসব নেত্রী। এমনকি জুলাই-আগস্টে মাসে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় বৈষ্যম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে আলোচনা আসেন তারা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই দাপুটে, মারমুখী নেত্রীদের। এখন কোথায়, কেমন আছেন সেই আলোচিত ছাত্রলীগ নেত্রীরা?

আতিকা বিনতে হোসাইন
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখার সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের নিপীড়নে অতিষ্ঠ ছিলেন হলের সাধারণ ছাত্রীরা। মিছিলে যেতে বাধ্য করা, অন্যথায় মারধরের শিকার হওয়ার ভয়ে আতিকা ছিলেন শিক্ষার্থীদের এক আতঙ্কের নাম। বগুড়ার মেয়ে আতিকা ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের খুবই ঘনিষ্ঠ। এর সুবাদে ক্যাম্পাসে তার ছিল ব্যাপক দাপট।

কমিটি বাণিজ্য, সচিবালয়ে তদবিরসহ নানা অভিযোগ আছে এই নেত্রীর বিরুদ্ধে। ১৭ জুলাই রাতে ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি ও হালকা উত্তম-মধ্যম দিয়ে আতিকাসহ ছাত্রলীগের সাত নেত্রীকে রোকেয়া হল থেকে বের করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তাকে আর দেখা যায়নি জনসমক্ষে।

তামান্না জেসমিন রিভা
ইডেন মহিলা কলেজের ছয়টি হলের ৩৮টি কক্ষের অঘোষিত মালিক ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা।

এসব কক্ষের প্রতিটিতে আটজন করে শিক্ষার্থী থাকতেন। অভিযোগ আছে, তিনি প্রতি মাসে প্রতিটি সিট থেকে দুই হাজার টাকা করে ‘ভাড়া’ নিতেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সে হিসাবে প্রতি মাসেই তার ছয় লাখ টাকা সিট-বাণিজ্য থেকে অবৈধ আয় হতো। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে রিভাকে হল ছেড়ে পালাতে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে রিভা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

আকলিমা আক্তার প্রভাতী
রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্স (হোম ইকোনমিকস) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী। গত সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। আর রাজনীতি নয়, সংসারে মনোযোগী হতে চান বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।

জেসমিন শান্তা
ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জেসমিন শান্তা। মারধরে আহত রোকেয়া হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বী এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শান্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

বেনজির হোসেন নিশি
ছাত্রলীগের ক্ষমতাধর নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন বেনজির হোসেন নিশি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিশির ক্ষমতা ছিল অসীম। অভিযোগ আছে, লেখক ভট্টাচার্য্যের কমিটি বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজি থেকে প্রাপ্ত অর্থের চার ক্যাশিয়ারের একজন ছিলেন তিনি।

ফরিদা পারভীন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদা পারভীন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পান। সর্বশেষ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হতে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তিনি। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশে ঢাকা সিটি কলেজে প্রভাষক হয়েছিলেন তিনি। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি সেই চাকরি হারান, চলে যান আত্মগোপনে।

সেলিনা আক্তার শেলী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সেলিনা আক্তার শেলী ছিলেন কলেজের অঘোষিত শাসক। তার কথায় যেন চলত ক্যাম্পাসের সব কিছু। কেউ কথা না শুনলেই নেমে আসত নির্যাতন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিল- মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করা, কেউ যেতে না চাইলে নির্যাতন করা ছিল তার নিয়মিত কাজ। ক্যান্টিনে খাবারের প্যাকেজের নির্ধারিত মূল্য ৮০০ টাকা থাকলেও শেলীর কথায় নেওয়া হতো এক হাজার টাকা। সুত্র: নিউজটুয়েন্টিফোর ।