প্লাটফর্ম নয়, কোম্পানির নাম পরিবর্তন করেছে ফেসবুক

অনলাইন ডেস্ক

0
814

আপাতত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক নামটিই থাকছে; তবে যে কোম্পানি থেকে এই প্লাটফর্মটি তৈরি তার নাম বদলেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন নাম ‘মেটা’।

বিনিয়োগ ও অংশীদার বৃদ্ধি, প্রযুক্তি সংযোজন, হুইসেল ব্লোয়ার বির্তকসহ নানা বাস্তবতায় নতুন করে ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরির প্রথম ধাপ হিসেবে এই নাম পরিবর্তন করলো প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহষ্পতিবার (২৮ অক্টোবর) এই নাম পরিবর্তনের খবরটি ফেসবুক (মেটার) হেড কোর্য়াটার থেকেই জানান, এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ।

শুধু নাম নয়, ফেসবুক কোম্পানি বদলে ফেলেছে তাদের লোগো। স্টক টিকারে এফবি (FB) হয়ে গেছে এমভিআরএস ( MVRS ) যা কার্যকর হবে ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে।

বৃহষ্পতিবার ফেসবুক লাইভ ইভেন্টের মাধ্যমে কোম্পানীর নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়া হয়। সরাসরি এই অনুষ্ঠানে বিশ্বের কোটি ইউজারদের কাছ থেকে যত প্রশ্ন এসেছে তার ৪৭ শতাংশই জানতে চেয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নাম পরিবর্তন হবে কিনা।

মার্ক জানান, সোশ্যাল প্লাটফর্মটির নাম আপাতত কেড়ে নেয়া হচ্ছেনা। তবে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে প্লাটফর্মের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ একটি এজেন্ডা।

প্রায় সাড়ে তিনঘন্টার ৪টি সেশনে মার্ক তার কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। জানান, ফেসবুকের সাথে যুক্ত হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্লাটফর্ম। ফলে একটি চশমা পরেই পৃথিবীর এক প্রান্তের রোগি অন্য প্রান্তের চিকিৎসকের সেবা নিতে পারবেন, কৃত্রিম স্পর্শ করে জানাতে পারবেন সহানুভূতি।

জুম বা বিভিন্ন অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে যারা ভার্চুয়াল মিটিং করছিলেন, তারা বিনামূল্যে এই সামাজিক মাধ্যমেই সেটা করতে পারবেন সীমাহীন সময় ধরে। যুক্ত হবে ‘পিক্সার-লাইক এনিমেটর’ নামের নতুন গেমিং প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে যেকোন গেম নতুন রিয়েলিটি পাবে। যিনি গেমটি খেলবেন, তিনি সরাসরি গেমের রিয়েলিটিতে প্রবেশ করে নিজেই গেমের চরিত্র হয়ে উঠবেন। প্রাথমিকভাবে এই প্রযুক্তিতে চুক্তি করেছে জনপ্রিয় গেম ‘গ্রান্ড থেফট অটো’।

এছাড়া পিএইচডি, গবেষণা, চিকিৎসা, ভাষা শেখাসহ শতাধিক সম্ভবনা থাকছে ফেসবুক তথা মেটার অগমেনটেড রিয়েলিটিতে। মূলত বিশ্বের সব প্রান্তকে ১৮০ ডিগ্রী দৃষ্টি সীমানায় নিয়ে আসার চেষ্টা থেকেই নতুন নাম দেয়া হয়েছে-মেটা। মার্ক জানান, সব সেবাকে একটি করে মাইল ফলক বা ভার্স হিসেবে চিন্তা করলে, গোটা কোম্পানি এই গ্রহের মধ্যেই তৈরি করবে মেটাভার্স।

মার্ক কোম্পানির ভবিষ্যতকে কোথায় দেখছেন? নিজের পেইজের লাইভ ইভেন্টে এমন প্রশ্নে মার্ক জানান, এখন এটা আমরা সামাজিক যোগাযোগ কোম্পানি হিসেবেই দেখছি। কিন্ত আমাদের ডিএনএ-তে যেটা আছে সেটা তারচেয়ে অনেক বড় কিছু। সামনের দিনগুলোতে বিশ্বে একমাত্র ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বা নেতৃত্ব দেবার মতন প্রযুক্তি হচ্ছে মেটাভার্স। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সাথে মেটাভার্স প্রযুক্তির পরিচয়টি হবে ধাপে ধাপে, একটু একটু করে।

মার্ক জানান, এখনই মেটাভার্সের পুরো সুফল মিলবেনা। অপেক্ষা করতে হবে ৫ থেকে ১০ বছর। এই সময়ের মধ্যে মেটার্ভাস প্রকল্পে নতুন প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের প্রয়োজন পড়বে, আর এজন্য আগামী বছরেই ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে মেটাভার্সে। এই বিনিয়োগ চলমান থাকবে।

নাম পরিবর্তনের দিনে নতুন দুটো প্রযুক্তির উদ্বোধন করেছে ফেসবুক। প্রথমে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের উদ্বোধন করেন মার্ক জাকারবার্গ। প্রজেক্ট ক্যামব্রিয়া নামের এই হেডসেটটিতে ফেসবুকের যেকোনো গেম খেলা যাবে, স্মার্টফোনের পাশাপাশি যুক্ত করা যাবে প্লে-স্টেশন এবং এক্সবক্স।

এরপর অগমেন্টেড রিয়েলিটি সুবিধা যুক্ত একটি স্মার্ট গ্লাসের উদ্বোধন করেন জাকারবার্গ। স্মার্ট গ্লাসটির নাম ‘নাসারে’। এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

এদিকে কোম্পানির নাম পরিবর্তনের ঘোষণার কয়েকঘন্টার মধ্যেই পুঁজিবাজারে মেটার শেয়ার মূল্য ৩ শতাংশ বেড়ে যায়।